"চিরদিনের অপেক্ষা" বাবা
বাবা আর নেই।
এই কথাটা মনে মনে হাজারবার বললেও, হৃদয়ে যেন বিশ্বাস হতে চায় না। বাবা যে মানুষটা ছিল আমার জীবনের ছায়া, আমার প্রথম শিক্ষক, আমার প্রথম বন্ধু।
শেষবার যখন বাবাকে হাসপাতালে দেখে এলাম, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলেছিলেন,
“তুই ঠিক মতো খাস, সময়মতো ঘুমাস, আর... নিজের মা'টার খেয়াল রাখিস।”
তারপর আর কিছু বলেননি। চোখে একটা শান্ত আলো ছিল, যেন অনেক কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেলেন।
আজ ঠিক সাত দিন হয়ে গেল বাবাকে মাটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার ঘরের প্রতিটি কোণে তার উপস্থিতি — এখনো আছে। সকালে উঠেই মনে হয়, বাবা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছেন, হয়তো ডেকেছেন, "এই রাহুল, ঘুম ভাঙে না তোর!"
আমি বাবার চেয়ারটাতে বসি, কিন্তু কিছুতেই ওভাবে বসতে পারি না — সেই ভার, সেই বিশালতা, আমার মধ্যে নেই।
মায়ের মুখটা আর আগের মতো নেই। যেন প্রতিটি নিঃশ্বাসে বাবার অভাব লেখা। আমি অনেক কিছু করতে পারি, কিন্তু বাবার জায়গাটা পূরণ করতে পারি না।
একদিন সন্ধ্যায় বাবার আলমারি খুলে দেখি — একটা পুরনো চিঠি। লেখা:
“রাহুল, আমি জানি আমি থাকব না সব সময়। কিন্তু তুই থাকবি, আর তোর মধ্যেই আমি থাকব। তুই মানুষ হ, ভদ্র হ, আর মনে রাখিস — আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি।”
চিঠিটা বুকে চেপে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। যেন বাবার কণ্ঠ আবার শুনতে পেলাম।
আজও সন্ধ্যা হলে বারান্দার বাতাসে বাবার গায়ের গন্ধ পাই। মা চুপ করে বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি পাশ থেকে শুধু তাকিয়ে থাকি।
আর মনে মনে বলি—
“বাবা, তুমি চলে যাওনি। তুমি আছো, আমার প্রতিটি শ্বাসে।”
চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
উত্তরমুছুন