একজন পুরুষকে প্রতিদিন কি কি করতে হয়!


একজন পুরুষকে প্রতিদিন কি কি চ্যালেঞ্জের ভিতর যেতে হয়!


 একজন পুরুষকে প্রতিদিন অসংখ্য 'অনিশ্চিত অবস্থা'র মোকাবিলা করতে হয়। দিনে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

বাসা থেকে বের হবার পর রিক্সার অপেক্ষা। না পেলে হাঁটতে হয়। রিক্সা পেলে ভাড়া নিয়ে কিছুক্ষণ ক্যাঁচাল করা লাগে। বাসে গেলে সিট পাবো নাকি পাবো না এই নিয়ে শঙ্কা। ভাড়া নিয়ে হেল্পারের সাথে তর্কাতর্কি।

অনেক যাত্রী উঠানোর জন্য একটু পরপর ব্রেক করলে চিল্লাতে হয়।
অফিসে গেলে একটার পর একটা কাজ। কোনো কাজ কাউকে বুঝিয়ে দিতে হয়, কোনো কাজ নিজে করতে হয়। কাজ ঠিকমতো না হলে ফেরত পাঠাতে হয়, নিজের কাজ ভালো না হলে ঝাড়ি খেতে হয়।

যারা ব্যবসায়ী, তাদের তো প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ঐ জিনিসের দাম বাড়বে? আগে থেকে কিনে রাখতে হবে? কাস্টমার বাকিতে চাচ্ছে, দিয়ে দেবো? ১৭২২ টাকা হয়েছে, ১৭০০ টাকা দিতে চাচ্ছে? কী বলবো? ডিলার আসছে, টাকা দিতে হবে। ক্যাশে তো এতো টাকা নেই।

চাকরি, ব্যবসা শেষে বাজারে যেতে হয়। মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। মাছের বাজারেও বেহাল দশা। কী মাছ নেবো? বড়ো মাছ নাকি পুঁটি মাছ? আজ না কিনে কাল সকালে কিনলে হবে না?
একজন পুরুষ ঘর থেকে দরজার বাইরে পা দেবার সাথে সাথে প্রতিমুহূর্তে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এইটা করবো নাকি ঐটা? এখন করবো নাকি পরে? প্রতিদিন অসংখ্য অনিশ্চিত ঘটনা থাকে।

রিক্সা পেতেও পারি, না-ও পারি পাওনা টাকা ফেরত পেতেও পারি, না-ও পারি মাছ কিনতে গেলে পছন্দ হতেও পারে, না-ও পারে রাস্তায় একজনের সাথে ধাক্কা লাগছে, তার সাথে ঝগড়া করতেও পারি, না-ও পারি একজন পুরুষ হিশেবে চিন্তা করুন, প্রতিনিয়ত আপনার ব্রেইনকে কতো শতো কমান্ড দিতে হচ্ছে। আপনি ঠান্ডা মস্তিষ্কের লোক। কিন্তু, আরেকজন এসে এমন কথা বললো, মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।

একজন পুরুষকে অনেক বেশি এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর ডিল করতে হয়। সে জানে না আজকে বসের মন ভালো নাকি খারাপ, রিক্সাওয়ালা/বাসের কন্ডাক্টার তার মেজাজ খারাপ করবে নাকি না।

দিনে ১০-১২ ঘণ্টা বাইরের এতোগুলো মানুষের সাথে কথাবার্তা বলে, এতোকিছু সামলে যখন সে ঘরে ফিরে, তখন কী আশা করে?
ঘরে গিয়ে অন্তত কিছুক্ষণ শান্তি পাবো। এইসময় অনিশ্চয়তা নেই।
বেশিরভাগ নারী এই জায়গায় পুরুষকে বুঝতে ভুল করে।

একজন পুরুষ পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে যখন বাসায় ফিরে, সে প্রত্যাশা করে তাকে কেউ স্বাগত জানাক।
এক গ্লাস শরবত, এক গ্লাস জল‌ সে নিজেই খেতে পারবে। কিন্তু, কেউ যদি তাকে এগিয়ে দেয়?

স্বামী বাসায় আসার পর কেন জানি নারীরা সংসারের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারা তখন তরকারি কাটা শুরু করে, রান্না বসায়, বাসাটা আরেকবার ঝাড়ু দেয়৷ বাজার ব্যাগ হাতে নিয়ে লিস্টের সাথে মিলিয়ে দেখে কী বাদ পড়েছে।

সারাদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরা স্বামীকে প্রথম ১৫ মিনিট সময় দেয়া আমি মনে করি একজন স্ত্রীর ঐ সময়ের অন্যতম দায়িত্ব।
আপনি সারাদিন বাসায় অনেক কাজ করছেন। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। কিন্তু, স্বামী ঘরে ঢুকার পর দৌড় দিয়ে রান্নাঘরে যাওয়াটা এই সময় ঠিক না।

পানি দেয়া, বলার আগেই লুঙ্গি/ট্রাউজার, টি-শার্ট দেয়া, কিছু খেয়ে আসছে নাকি খাবে জিজ্ঞেস করা, স্নান করতে চাইলে জল গরম লাগবে কিনা (যাদের লাগে) জিজ্ঞেস করা -এগুলো একজন স্ত্রী যদি ঠিকমতো করতে পারে, পুরুষ এই ওয়েলকামেই সন্তুষ্ট।

তার মেজাজটা ঠান্ডা হলো। বাসাকে শান্তির জায়গা মনে হলো।
সারাদিন বাইরে কাজ করা একজন পুরুষ বাসায় আসার পর তাকে অন্তত ১ ঘণ্টা নিজের মতো থাকতে দিন। ময়লা ফেলতে হবে, বাজার লিস্টের দুই আইটেম বাদ পড়েছে, আগামীকাল বাসা ভাড়া দিতে হবে এগুলো ঐ ১ ঘণ্টা মনে করিয়ে দেবার কোনো দরকার নেই।

একজন নারী ঐ ১ ঘণ্টায় জানে না সারাদিন তার স্বামীর ওপর কী পরিমাণ ধকল গেছে, তার মুড কেমন আছে। আস্তে আস্তে স্বামী এগুলো বলবে আজ এই এই হয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আমি কখনোই প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক মনে করি না। একজন কতো কাজ করলো, আরেকজন কম করলো এগুলো বিবেচ্য না। বরং একজন আরেকজনকে কীভাবে সম্মান করবে, কীভাবে তাকে মূল্যায়ন করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

একজন গৃহিণী স্ত্রীকে যেমন সম্মান দিতে হবে, তার কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে, তেমনি নারীকেও অবশ্যই স্বামীর কাজের মূল্যায়ন দিতে হবে।

লেখাগুলো বাস্তব বাদি, কেউ মনে কষ্ট নিবেন না প্লিজ।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন,
সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণে রাখুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমি একজন ব্যর্থ মা!!

"মা দিবস" সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি

বাবা “ছায়াটা এখন আমার”